সাহিত্য ও শিল্পকলার ভূবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বহুলব্যবহৃত শব্দ হলো: অাঁভগার্দ (Avant-garde)। এর বুৎপত্তিতে একটি সামরিক ঐতিহ্য লক্ষণীয়। তা হলো: এ্যাডভান্স গার্ড। এটি একটি এগিয়ে চলার মন্ত্র। সেই থেকে সাহিত্য ও শিল্পকলার অঙ্গনে সংশ্লিষ্ট সময়কে ছাড়িয়ে এগিয়ে চলার, নতুন কিছু আবিষ্কারের, নতুন অভিযানের, নতুন পথসন্ধানের যে প্রবণতা লক্ষ করা যায় তাকেই অভিহিত করা সঙ্গত, অাঁভগার্দ হিশেবে। ১৮২০-এর দশকের দিকে সন্ত সাইমন এবং তাঁর প্রাথমিক সমাজতান্ত্রিক সহগামীরা প্রথমবারের মতো আঁভগার্দের ধারনা শিল্পে প্রয়োগ করেন।১ ১৮৪৫ সালে গ্যাব্রিয়েল ল্যাভারদান্ত প্রকাশিত একটি গ্রন্থে (De la mission de lart et du role des artistes) অাঁভগার্দ প্রসঙ্গে বলা হয় যে, সমাজের দর্পন হিশেবে শিল্প সমাজের সর্বাধিক প্রাগ্রসর প্রবনতাসমূহ প্রকাশ করে। অতএব, শিল্প সঠিক দায়িত্ব পালন করছে কিনা, কিংবা শিল্পী সত্যিই অাঁভগার্দভূক্ত কিনা তা জানা খুবই জরুরি।২ ১৮৭৮ সালে বাকুনিন তৎকালীন রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রতি অনুরক্ত একটি সাময়িকী স্বল্পকালের জন্যে প্রকাশ করেন, যার নাম L’ avant-garde. এমনকি সেসময়েও সাহিত্য ও শিল্পকলায় অাঁভগার্দ শব্দটি কদাচিৎ প্রযুক্ত হতে দেখা যেতো। বোদলেয়ারের মতো সাহিত্যিককেও দেখা গেছে অাঁভগার্দকে বিদ্রূপের সাথে ব্যাখ্যা করতে, যদিও তিনি র্যাডিক্যাল লেখকদের কথা অন্যভাবে উল্লেখ করেছেন।
যাই হোক, উনিশ শতকের শেষ চতুর্থাংশে অাঁভগার্দ শব্দ ও অভিধাটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয়। কালক্রমে অাঁভগার্দের শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক অর্থ রাষ্ট্র-সামাজিক অর্থকে বিচু্যত করে। তারপর দীর্ঘকাল সাহিত্য ও শিল্পকলায় অাঁভগার্দের উল্লেখ গতানুগতিকতা লাভ করে। আজকাল আমরা প্রতীকবাদী কবি ভার্লেইন, রিম্বদ এবং ম্যালার্মেকে অাঁভগার্দের প্রথম সদস্য হিশেবে ভাবতে অভ্যস্থ, যেমনটি ভাবি এ্যাবসার্ড নাটকের নাট্যকার বৃন্দকে কিংবা এ্যালেইন রোবি গ্রিলেট, মিশেল বিউতর, ন্যাথালি সারাতের মতো ঔপন্যাসিকদের।৩
অতএব, দেখা যায় যে, শিল্প-সাহিত্য- সংস্কৃতি কিংবা রাজনীতি-সমাজনীতির ভূবনে যে প্রবনতা নতুন পথ কিংবা মতের সন্ধান দেয়, সামগ্রিকভাবে সেই চির-প্রাগ্রসর মানস-প্রবনতার আন্দোলনকে অাঁভগার্দ বলা যেতে পারে। আঁভগার্দ মানে এগিয়ে চলা, এমনকি নিজের সময়কে পেছনে ফেলে। অাঁভগার্দ ভাবনার জগতে চিরনবীন ও চির-বিকার্য এক আন্দোলনের নাম। মানুষ যতোদিন থাকবে এই গ্রহের বুকে, কিংবা থাকবে গ্রহান্তরে, ততোদিন থাকবে মানুষের ভাবনার বিবর্তন। পুরনো ভাবনা কিংবা সাম্প্রতিক ভাবনাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে নতুন ভাবনা। ভাবনার এই গ্রাগ্রসরতাকে গ্রাহ্য করা যায় অাঁভগার্দ হিশেবে। ঐতিহাসিক বিচারে অাঁভগার্দ উনিশ শতকের একটি প্রপঞ্চ হলেও ভাবার্থে তা সব সময়ের জন্যে প্রযোজ্য কিংবা নতুন সময়ের অাঁভগার্দকে বড়োজোর নয়া অাঁভগার্দ (New Avant-garde) বলে অভিহিত করা যেতে পারে। সমকালিনতার বিচারে অাঁভগার্দ আধুনিকতার সমার্থক হলে উত্তরাধুনিকতাকে নয়া অাঁভগার্দের সমার্থক বিবেচনা করা যায়। সেইসূত্রে বিশ শতকের চলি্লশ/পঞ্চাশের দশক থেকে সাহিত্য ও শিল্পকলার প্রাঙ্গনে যে সকল প্রবনতা/পরিবর্তন সূচিত ও বিকশিত হয়েছে এবং আজতক হচ্ছে তাদেরকে উত্তরাধুনিকতা কিংবা নয়া অাঁভগার্দের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা বিধেয়।৪ চির বিকার্য এই অাঁভগার্দ প্রবনতা কালপরস্পরায় নয়া সমালোচনার (New Criticism) জন্ম দিয়েছে। বস্তুত, বিশ শতকের গোড়ার দশকগুলোতে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার সাহিত্য ও সমালোচনার জগতে ব্যাপক ও বিচিত্র তত্ত্বসমারোহ ঘটেছিলো। পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী তত্ত্বসমূহের বিকাশের সাথে সাথে নতুন ও নিরীক্ষাধর্মী সমালোচনা তত্ত্বের উদ্ভব ঘটা শুরু হলো। ঐ শতকের দ্বিতীয় চতুর্থাংশের মধ্যে যে সকল সমালোচনা-প্রপঞ্চ উদ্ভূত হয়েছিলো তাদের মধ্যে নয়া সমালোচনা প্রধান। ‘New Criticism’ অভিধাটি সর্বপ্রথম ব্যবহৃত হয়েছিলো জোয়েল ই. স্পিনগ্র্যান কতর্ৃক ‘The New Criticism’ শীর্ষক কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বক্তৃতায়। সেই বক্তৃতাকেই নয়া সমালোচনার ইশতেহার হিশেবে গণ্য করা যেতে পারে। যাই হোক, ১৯৪১ সালে জন ক্রো র্যানসম-এর The New Criticism নামক গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে নয়া সমালোচনার ধারনাটি সাধারণ্যে ব্যবহৃত হওয়া শুরু করে। র্যানসম উক্ত গ্রন্থে আই.এ. রিচার্ডস, উইলিয়াম এম্পসন, টি.এস. এলিয়ট এবং ইভর উইন্টার্স-এই চারজন যশশ্বী সমালোচককে সমালোচনা করেন এবং নয়া সমালোচনাকে একটি জোরালো তাত্তি্বক ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। বস্তুত, র্যানসমই নয়া সমালোচনা তত্ত্বের চাবি-ব্যক্তিত্ত্ব এবং তাঁর ওকালতিতেই নয়া সমালোচনা একটি ঘরানার মর্যাদা লাভ করে। ধারনার নতুনত্বের চাইতে সমালোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপই নয়া সমালোচনা আন্দোলনকে অধিকতর লক্ষনীয় করে তুলেছিলো।
ঐতিহাসিক বিবেচনায় নয়া সমালোচনা একটি আমেরিকীয় সমালোচনা অন্দোলন যা মুখ্যত টেকস্টের নিবিড়/অন্তরঙ্গ আলোচনার ভিত্তিতে উদ্ভূত। ১৯৪০ থেকে ১৯৬০ সালের ভেতরে এই সমালোচনা ধারা শীর্ষমুখী হয় । এলিয়টের সাহিত্য বিষয়ক ধারনা এবং রিচার্ডসের টেকস্ট আলোচনার উপায় সম্পর্কিত ভাবনার দ্বারা নয়া সমালোচনা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে । সর্বদাই একটি কবিতা কিংবা একটি গদ্যাংশকে কমবেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ স্বত্তা হিশেবে আলোচনা করতে চাইলে রিচার্ডসকে দিয়ে শুরু করে নয়া সমালোচকদের দ্বারা বিকশিত করতে হবে ।৫
টেকস্টের উপরে ঝোঁক একই সময়ে বৃটিশ সমালোচনারও একটি বৈশিষ্ট ছিলো। কিন্তু বৃটিশ সমালোচকেরা টেকস্টের কৌশলগত বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কদাচিৎ অনুপুঙ্খ ছিলেন । অধিকন্তু, যেখানে লেভিসের মতো একজন বৃটিশ সমালোচক টেকস্টের ভেতরে সুস্পষ্ট নৈতিক এবং সামাজিক বিশ্বাসসমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট হতে চেয়েছেন, নয়া সমালোচকেরা সেখানে টেকস্টকে জ্ঞাত করে আধ্যাত্দিক বিশ্বাসগুলোর সাথে অধিকতর সংশ্লিষ্ঠ ছিলেন । নয়া সমালোচকদের এই বিশেষ বৈশিষ্ট সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ব্যাখ্যাত হয়েছে উইলিয়াম এম্পসনের কাজের সাথে তুলনার দ্বারা। এম্পসনকে তাঁর অন্তরঙ্গ বিশ্লেষণের চাতুর্য ও সম্পূর্ণতার ক্ষেত্রে নয়া সমালোচকদের অনুশীলনের সাথে ঘনিষ্ট বৃটিশ সমালোচকের মতো মনে হয় । যাই হোক, তিনি(এম্পসন) টেকস্টের অর্থের বিবিধ স্তরের প্রতি সাড়া দিয়ে মুক্ত মনের এক উদার সমালোচক হিশেবে নয়া সমালোচনার ধারাকে সমৃদ্ধ করেন।৬
নয়া সমালোচকবৃন্দ কবিতার অন্তরঙ্গ পঠনের (close reading)) ওপর এবং গ্রন্থের অনুপঙ্খ বিশ্লেষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁরা কবির ব্যক্তিত্ব কিংবা মানসিকতার ওপর কিংবা অন্য কোনো বাহ্যিক উৎসের ধারনার কিংবা রাজনৈতিক ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক কিংবা ধর্মীয় বিষয়ের ওপরও গুরুত্ব দেন নাই। সাহিত্য সমালোচক সকল বহিস্থ সংস্কার ও পক্ষপাতমুক্ত হয়ে খোলা মনে, বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। নয়া সমালোচকবৃন্দ কবিতার কাঠামোর এবং কাঠামো বিনির্মানে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদানের ওপর মনোনিবেশ করেন। বস্তুত, নয়া সমালোচনায় শব্দ, পদ, ভাষা, প্রতীক, রূপক,উপমা, উৎপ্রেক্ষা, ছন্দ, সুর ও বিষয়, এককথায়, আঙ্গিক ও ভাববস্তুর সকল উপাদান অত্যন্ত অন্তরঙ্গভাবে বিশ্লেষিত হয় যা প্রকারান্তরে একজন লেখকের সত্যিকার অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। নয়া সমালোচকদের কাছে একটি কবিতা কিংবা একটি শিল্পকর্ম নিরপেক্ষ ও আত্দনির্ভরশীল সত্তা। উইমসাত ও ব্রুকস্ তাঁদের The Verbal Icon গ্রন্থে বলেছেন “A poem should not mean but be” অর্থাৎ কবিতায় কোনো আরোপিত অর্থ থাকবে না, এটি কেবল নিজেই অস্তিত্বশীল থাকবে এবং এভাবেই অর্থপূর্ণ হবে। পঠনের এই অন্তরঙ্গতা অতীতে থাকলেও তা নয়া সমালোচকদের বিশেষ চিহ্নায়ক হিশেবে কাজ করে। এভাবে অসংখ্য মূল্যবান কাজ হয়েছে এবং অনেক মহৎ সাহিত্য ও শিল্পকর্মের নতুন ব্যাখ্যাদান হয়েছে। শব্দার্থ বিজ্ঞানের (Semantics) প্রয়োগও নয়া সমালোচনার জগতে এক ঋদ্ধ যোজনা হিশেবে বিবেচিত হয়েছে। নয়া সমালোচনায় নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্বের মধ্যে এ্যালেন তাতে, আর. পি. ব্ল্যাকমুর, কেনেথ বার্ক, ক্লিন্থ ব্রুকস্, ডবি্লউ. কে. উইমসাত এবং রবার্ট পেন ওয়ারেন অন্যতম। শেষোক্ত দুজন Understanding Poetry (১৯৩৮) গ্রন্থে মার্কিন একাডেমিক বলয়ে নয়া সমালোচনার মূলনীতিসমূহ প্রচারে সহায়তা করেছেন। নয়া সমালোচনার সাম্প্রতিকতম বিন্যাস অবশ্য কাঠামোবাদ (Structuralism) ও বিনির্মাণবাদে (Deconstruction) খুঁজে পাওয়া যাবে। নয়া সমালোচনার উদ্ভবের পেছনে বিভিন্ন উপাদান কাজ করেছিলো। বস্তুত সেসময়ে ইংল্যান্ড ও আমেরিকা উভয় স্থানেই সমকালিন সাহিত্যাবস্থা নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছিলো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত ও অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হচ্ছিলো। দু্্্্্্্্্্্্্্্্ই মহাসমরের টানাপোড়েনের ভেতরে আকস্মিক এবং মৌলিক সামাজিক পরিবর্তন শুরু হয়েছিলো। সে তুলনায় সাহিত্য ও সমালোচনার আবস্থা ছিলো অপেক্ষাকৃত নিশ্চল। ভিক্টোরিয় শিষ্টাচার এবং নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের সেকেলে ধারা মুক্তসাহিত্য ও সমালোচনার উন্নয়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালো। লেখকবৃন্দ এই সাহিত্যিক অচলায়তন এবং সমালোচনা-জাড্য থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছিলেন এবং অত্যন্ত আন্তরিকভাবে একটি ধনাত্দক পথের স্বপ্ন দেখছিলেন। সাহিত্যের পটভূমি ও পরিপ্রেক্ষিতের ওপর অতিরক্ত গুরুত্ব প্রদান এবং কর্মের চাইতে লেখকের ওপর অধিক মনোযোগের বিরুদ্ধে প্রায় সকল সমালোচনা শিবিরে উদ্ভূত বিদ্রোহ তাতে প্রান ও গতির সঞ্চার করলো।
চিত্রকল্পবাদ (Imagism)এবং এর সমার্থক সমালোচকবৃন্দও নয়া সমালোচনার উদ্ভবের পথ সুগম করেছিলেন। টি.ই. হিউমের Speculatious নয়া সমলোচনার প্রস্তুতি-কর্মের অন্যতম প্রধান গদ্য দলিল হিশেবে বিবেচিত হতে পারে। এই গ্রন্থে হিউম দাবী করেছেন যে, কবির প্রধান কাজ হওয়া উচিৎ তার শৈলী নিয়ে। অন্যকথায়, হিউম টেক্স্টের অন্তরঙ্গ পাঠের পরামর্শ দিয়েছেন যা এই নয়া ঘরানার মূল মতবাদ হিশেবে পরিগণিত হয়েছিলো। এজরা পাউন্ডও কবিতার এই আঙ্গিকগত নিবিড় পঠনের দিকটিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ১৯১২ সালে হ্যারিয়েট মনরোকে লেখা এক পত্রে তিনি মার্কিন কবিদের এইমর্মে পরামর্শ দেন যে, কবিতাকে তাদের এমনই এক শিল্পকর্ম হিশেবে দেখা উচিত যার আঙ্গিক, প্রকরণ এবং মাধ্যমসমূহ ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে। পাউন্ড আরো বলেন যে, যদি তারা তাদের কবিতার অস্তিত্ব ও বিকাশ প্রত্যাশা করে তবে তাদের অবশ্যই উচিত কবিতার ঐসকল দিকের গভীর পঠন ও বিশ্লেষণ। এভাবে চিত্রকল্পবাদীরা (Imagists) সেই সকল প্রবনতাকে প্রণোদনা জোগান যেগুলো নয়া সমালোচনার আন্দোলনে কাজে লেগেছিলো।
অধিকন্তু, অনেক পূর্ববর্তী এবং সমকালীন সমালোচনা আন্দোলনের কাছেও এই নতুন ঘরানা নানাভাবে ঋণী। মনস্তত্ত্ববিদেরাও এর উদ্ভবে অবদান রেখেছিলেন। সাহিত্যকে প্রোপাগান্ডা হিশেবে দেখাবার মার্কসীয় উদ্যোগের বিপরীতে সৃষ্ট মতামতও এই নয়া ঘরানার উদ্ভবে অবদান রেখেছে। নয়া মানবতাবাদীদের নৈতিকতার প্রতি গুরুত্ব প্রদানের বিষয়টিও নয়া সমালোচকদের শিক্ষামূলকতা কিংবা নীতিমূলকতার প্রতি বিরোধী মানসিকতা সৃষ্টিতে সাহায্য করেছিলো। এভাবে বিভিন্ন ঘরানা ও আন্দোলন স্বতন্ত্র ও বিচ্ছিন্নভাবেই নয়া সমালোচনার উদ্ভবে ভুমিকা রেখেছিলো।
দ্রুত শিল্পায়ণ ও নগরায়ণের কুপ্রভাব, যুদ্ধোত্তর নৈরাশ্য, হতাশা ও বিচ্ছিন্নতাবোধ, পুরনোর প্রতি অনাগ্রহ, ঐতিহ্যের প্রতি বিতৃষ্ণা, গতানুগতিকতার প্রতি বিবমিষা- সবমিলে, এক অনাত্দীয় পরিবেশ থেকে মুক্তির জন্যে মানুষের যে কাতরতা, তার সাথে নতুনের প্রতি শাশ্বত আগ্রহ ও চিরন্তন অাঁভগার্দ প্রবনতার যোগফল হলো নয়া সমালোচনা। অবশ্য এতে করে তাদের মুক্তি এসেছিলো কিনা তা বলা শক্ত। তবে এটুকু বলা অসঙ্গত হবেনা যে, উপর্যুক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভাবনা জগতে যে ঘোর অমানিশার সৃষ্টি হয়েছিলো, এই নয়া আন্দোলন তা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলো। চিরদিনের জন্যে না হলেও সাময়িকভাবে তো বটেই। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো, এই নয়া আন্দোলনের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ প্রভাবে পরবর্তীতে মনুষ্য ভাবনার জগতে ঠাঁই পেয়েছে উত্তরাধুনিক, কাঠামোবাদী, উত্তর-কাঠামোবাদী, উত্তর-ঔপনিবেশিক প্রভৃতি চিন্তা। অধুনা আমরা যে সকল জটিল থেকে জটিলতর বৌদ্ধিক ভাবনার মুখোমুখি হচ্ছি, তার প্রেরনা বস্তুত মানুষের চির-বিকার্য অাঁভগার্দ প্রবণতা ও নয়া সমালোচনার প্রভাব।
উল্লেখপঞ্জি:
৪.প্রাগুক্ত,পৃ-৭৩৪
5. Peck, John and Coyle, Martin. Literary Terms and Criticism New Edition. Macmillan Press Ltd, 1993, c„-180
No comments:
Post a Comment